আগামী ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের চতুর্থ বছর পূর্তিতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলটি এই দিনে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপস্থিতিতে সমাবেশ করতে চায়। আজকালের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে কর্মসূচির অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হতে পারে। একইভাবে ঢাকার বাইরের জেলা সদর ও মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। এর মূল উদ্দেশ্য, এ দিনে বড় শোডাউন করে শক্তি প্রদর্শন করা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও ৫ জানুয়ারির কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির নেতারা জানান, দলের পক্ষ থেকে যে কর্মসূচিই নেওয়া হোক তা শান্তিপূর্ণভাবে ব্যাপকভাবে করার সিদ্ধান্ত হয়। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে আমাদের কর্মসূচি থাকবে। আনুষ্ঠানিকভাবে এটা যথাসময়ে গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে রাজধানীতে সমাবেশ বা ঘরোয়া আলোচনাসভা যে কোনো কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে। তবে কী কর্মসূচি নেওয়া হবে দুয়েক দিনের মধ্যে তা চূড়ান্ত করা হবে।
বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফাভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। ওই নির্বাচনে ১৫৪টি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। বাকি আসনগুলোয়ও শতকরা ৫ ভাগ ভোটার ভোট দিতে কেন্দ্রে যায়নি বলে বিএনপি অভিযোগ করে। দেশের জন্য ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যা দিয়ে ২০-দলীয় জোট এই দিনটিকে কালো পতাকা হাতে প্রতিবাদ সভা-সমাবেশ বিক্ষোভ কর্মসূচি করে আসছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তারা কোনো সংঘাতে যেতে চায় না। ফলে ৫ জানুয়ারি ঘিরে বিগত বছরগুলোয় সারাদেশে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল, এবার তা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে ব্যাপক জমায়েত ঘটিয়ে দিনটিতে কালো পতাকা হাতে রাজপথে থেকে কর্মসূচি করবে দলটি।
নেতারা আশা করছেন, এ বছর ৫ জানুয়ারি সরকার তাদের সমাবেশ করতে দেবে। তবে অনুমতি না দিলেও কঠোর অবস্থানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আছে দলটির। রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি না পেলেও হরতাল বা অবরোধের মতো কর্মসূচিতে যাবে না। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেই দলটির। সেক্ষেত্রে রাজধানীতে সমাবেশ করার অনুমতি না পেলে প্রতিবাদে মহানগরের থানায় থানায় বিক্ষোভ অথবা ঘরোয়াভাবে ৫ জানুয়ারি উপলক্ষে আলোচনাসভা বা সংবাদ সম্মেলনের মতো কর্মসূচি করতে পারে দলটি।
দলের নেতারা আরও বলেন, ৫ জানুয়ারি কর্মসূচি উপলক্ষে এখনই সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে এমন কর্মসূচিতে গেলে আবার নেতা-কর্মীদের হয় জেলে যেতে হবে, নয়তো পালিয়ে বেড়াতে হবে। তাই জিয়া চ্যারিটেবল ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণার আগ পর্যন্ত সংঘাতপূর্ণ কোনো কর্মসূচিতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত আছে। দলটির নেতাদের শঙ্কা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উল্লিখিত মামলায় সাজা দেওয়া হতে পারে। তারা মনে করে, বিএনপি মানে খালেদা জিয়া। তাকে সাজা দেওয়া হলে বিএনপির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। তাই দলটির নেতারা খালেদা জিয়ার রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। সাজা দেওয়া হলে রায়ের দিন থেকেই সব বাধা উপেক্ষা করে রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত এখন পর্যন্ত নিয়ে রেখেছে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন করে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। গণতন্ত্র হত্যা দিবসের এ দিনটির প্রতিবাদে কর্মসূচি করা গণতান্ত্রিক দল হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব। সেক্ষেত্রে ঢাকায় সমাবেশসহ দিনটিতে কালো পতাকা হাতে নেতাকর্মীদের রাজপথে থাকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নেওয়া হতে পারে।
সূত্র : আমাদের সময়
Leave a Reply